আজ

  • শুক্রবার
  • ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট!

আপডেট : সেপ্টেম্বর, ১২, ২০১৮, ৯:২৮ অপরাহ্ণ

অফিস ডেস্ক

তুরস্কে আটক একজন আমেরিকান যাজককে নিয়ে কূটনৈতিক বিবাদের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র তুর্কি ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়মের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করার পর ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমান ক্রমাগত কমছে।লিরার মূল্যমানে ধস নামার পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলছেন, ‘কৌশলগত মিত্র হয়েও আমেরিকা আমাদের পিঠে ছুরি মেরেছে(!)

➡আমেরিকার সাথে বিবাদের কারণগুলো কি?
তুরস্কের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবাদের #মূল কারণ হলো, গত দু বছর ধরে তুরস্কে একজন আমেরিকার ধর্মযাজক বন্দী আছেন যাকে এরদোয়ানবিরোধী অভ্যুত্থান এবং কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য অভিযুক্ত করা হয়।যুক্তরাষ্ট্র তার মুক্তি দাবি করলেও তুরস্ক তাকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করে। এর পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তুরস্কের ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন, আর তার আগে তুরস্কের দু’জন মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এরদোয়ান বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তুরস্ক সেই ব্যর্থ অভ্যুথানের পেছনে ফেতুল্লাহ গুলেনের আন্দোলন জড়িত ছিল বলে দাবি করে, যিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় অবস্থান করছেন।গুলেনকে বিচারের জন্য তুরস্কের হাতে তুলে দেবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র – যা এরদোয়ানের ক্ষুব্ধ হবার আরেকটি কারণ।
যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কুর্দি বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে।এটাও তুরস্কের পছন্দ নয়।কারণ তুরস্ক নিজেই তাদের ভুখন্ডে কুর্দি বিদ্রোহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
এছাড়াও ইদানিং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে তুরস্ক যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ নয়।ন্যাটো সদস্য হয়েও ন্যাটোর শত্রু রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কিনছে তুরস্ক।

➡অর্থনৈতিক সংকট:
গত ১২ মাসে তাদের মুদ্রা লিরার দাম কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। বিদেশি ঋণনির্ভর অর্থনীতির দেশ তুর্কির জন্য এ সমস্যা অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছে এ কারণে যে, তাদের সরকার এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। ফলে ঋণ পরিশোধের জন্য এখন তাদের প্রায় দ্বিগুণ খরচ করতে হচ্ছে।মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ।

➡প্রশ্ন হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি কি জিনিস?
পণ্য-সেবার মূল্য টাকার অঙ্কে বেড়ে গেলে অর্থনীতির ভাষায় তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। সাধারণত
১-পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ঐ পণ্য ক্রয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রার প্রয়োজন অথবা
২-একই পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের পরিমাণ পণ্য কিনতে গেলে পরিমাণে কম পাওয়া যায়।

সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। একই ভাবে অর্থনীতিতে পন্যের আসল বিনিময়মূল্য কমে যায়।আগে ১০০ টাকায় ১কেজি আপেল কিনে থাকলে বর্তমানে ১ লাখ টাকায় ১কেজি আপেল পাবেন।
(উদাহরণটা জিম্বাবুয়ের প্রেক্ষাপটে দিলাম।বাংলাদেশের ১০০ টাকা ভাঙিয়ে আপনি 92,233,720,368,547,760.00 জিম্বাবুয়ান ডলার পাবেন 🐸)

আগের প্রসঙ্গে ফেরত যাই।
তুরস্কে ব্যাংক সুদের হার ইতিমধ্যে ১৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে।উচ্চ মুদ্রাম্ফীতি সামাল দিতে প্রয়োজন সুদহার বাড়ানো। তা করা যাচ্ছে না।করলে তা ২০ শতাংশের ওপরে তুলতে হবে। তুর্কির গণতান্ত্রিক একনায়ক রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান চান না মুদ্রাম্ফীতি সমস্যার গতানুগতিক সমাধান, সুদহার বাড়াতে কিংবা আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা নিতে। সুদহার বাড়ালে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায় বলে তিনি ওপথে হাঁটতে নারাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।

➡শুরুটা যেভাবে:
২০০৮ সালে উন্নত বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হলে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার কমিয়ে এবং মুদ্রা ছাপিয়ে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়িয়ে মন্দা ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। সে সময়ে তাদের সুদহার শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।এরদোয়ান এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে প্রচুর ঋণ গ্রহণ করে নিজ দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে তোলেন। ঋণের টাকায় রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বাড়িঘর, এয়ারপোর্ট বানিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলেন।ফলে বৃদ্ধি পায় দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি।এই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে একেবারে সামনের কাতারে চলে আসে।
২০১০ সালে তুর্কির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৫%
২০১১ সালে ১১.১%
২০১২ সালে ৪.৮%
২০১৩ সালে ৮.৫%
২০১৪ সালে ৫.২%
২০১৫ সালে ৬.১%
২০১৬ সালে ৩.২%
২০১৭ সালে তা ৭.৪%

২০১৭ সালে তুর্কির জিডিপি ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়; ৭ দশমিক ৮ শতাংশ নিয়ে আয়ারল্যান্ড ছিল প্রথমে। ২০১০ সাল থেকে তুর্কির প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট ভালো থাকায় অনেকে তুর্কিকে ইউরোপের চীন বলে অভিহিত করছিল। ২০১০-১৭ সময়কালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট ভালো হলেও মুদ্রাম্ফীতি গড়ে ৭ শতাংশের ওপরে ছিল। ২০১৭ সালে মুদ্রাস্টম্ফীতি বেড়ে ১১ শতাংশে উঠে গেলে প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও তুর্কির প্রকৃত আয় কমে যায়।আর এখানেই মারা খাচ্ছে তুরস্ক

➡তুরস্ক ন্যাটো তে আছে অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নে নেই কেন?
বহুদিন ধরে কটু কথা শুনিয়ে, তিরস্কার করে, ধমক দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত না করায় ইউরোপের সঙ্গে তুর্কির চলছিল টানাপড়েন। তুর্কির এক জেনারেল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে তুর্কিকে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন,
“তুর্কি যদি ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত না হয়ে ওয়ারস প্যাক্ট(ন্যাটোর রাশিয়ান ভার্শন যা বর্তমানে বিলুপ্ত) জোটভুক্ত হতো, তবে বহু আগেই সে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত”

ন্যাটো সদস্য তুর্কির সঙ্গে আমেরিকানদের রাজনৈতিক বোঝাপড়া ঠিকঠাক হচ্ছিল না ইরাক যুদ্ধের সময় থেকেই। আমেরিকার ইরাক দখল অভিযানের সময় থেকে তুর্কির পশ্চিমপ্রীতি কেটে যেতে শুরু করে। এরদোয়ান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে সমস্যা লেগেই আছে। এরদোয়ান নিজেদের শক্তির ভারসাম্য রক্ষার্থে চেষ্টা করেছে একদিকে আমেরিকা, আরেক দিকে পুতিনের রাশিয়াকে রেখে একটা সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে দুই পক্ষ থেকেই সুবিধা আদায় করতে। অনেকটা সুবিধা তাতে তিনি পেয়েছেনও। কিন্তু সিরিয়া যুদ্ধে কুর্দিদের আমেরিকা সহায়তা করায় এ সমস্যা আর সহজে সমাধানযোগ্য ছিল না। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ওপর আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি অস্বীকার, ইসলামী জঙ্গিদের সঙ্গে অস্বচ্ছ যোগাযোগ, আইএসের সঙ্গে যুদ্ধে আমেরিকাকে এয়ারবেস ব্যবহার করতে না দেওয়া, রাশিয়া থেকে এস-৪০০ মিসাইল কেনা ইত্যাদি কারণে তুর্কি-মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে যায়।

➡প্রেসিডেন্ট এরদোগান কিছু কথা:
কামাল আতাতুর্কের পর কয়েক দশক পার হলে ধীরে ধীরে তুর্কিরা তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে থাকে। এরদোয়ান নিজে বিভিন্ন প্রগতিশীল, আধা প্রগতিশীল দলের সঙ্গে রাজনীতি করলেও মূলত গোঁড়া ইসলামিক গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ওপর ভর করেই রাজনীতি করতে থাকেন। গোঁড়া ইসলামিকদের একত্রিত করে একেপি গঠন করে ২০০৩ সালে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করলে তা হয় রাষ্ট্রক্ষমতায় নিপীড়িতদের ফিরে আসা। ২০১৬ সালে এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সেনাবাহিনীর একাংশ ক্যু করার চেষ্টা করলে এরদোয়ান তা ধর্মনিরপেক্ষতা উৎপাটনের কাজে লাগিয়ে নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করেন। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার অভিপ্রায়ে ক্যুর প্রতিক্রিয়ায় এরদোয়ান অসংখ্য বিদ্রোহী হত্যা সহ ৮০ হাজার লোককে গ্রেফতার; তিন হাজার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাস বন্ধ এবং চার হাজার বিচারক ও আইনজীবীকে বিতাড়িত করেন। এ ছাড়াও নির্যাতিতের তালিকায় রয়েছেন শিল্পী, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী। ২০১৮ সালের জুনে আগাম নির্বাচন দিয়ে জয়লাভ করে তিনি প্রধানমন্ত্রীশাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে তুর্কির রাষ্ট্রকাঠামো রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থায় নিয়ে যান। নিশ্চিত করেন নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য।

➡এরদোগানের দুর্বলতা:
রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য নিশ্চিত হলেও অর্থনীতিতে এরদোয়ান সৃষ্টি করেছেন বড় রকমের দুর্বলতা। কম সুদে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ নিয়ে রাস্তাঘাট, অট্টালিকা, এয়ারপোর্ট বানিয়ে তিনি দেশকে ঋণনির্ভর করে তুলেছেন। ঋণপ্রবাহ কখনোই অসীম নয়। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে ঋণদাতারা ঋণের প্রবাহ বাড়িয়ে বা কমিয়ে থাকেন। প্রবাহ শুকিয়ে এলে ঋণগুলো এক সময়ে সুদ-আসলে শোধ দিতে হবে- তা তিনি মাথায় রাখেননি। যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দরকার ১৮০ বিলিয়ন, সেখানে তুর্কির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এখন আছে ৯০ বিলিয়ন ডলার। তুর্কির মুদ্রা লিরার দাম তো পড়বেই।

➡মন্দের ভালো:
অর্থনৈতিক সংকটের ফলে দেশটির নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম প্রতিনিয়ত বাড়লেও, লিরার দরপতনের সবচেয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেখানকার পর্যটন শিল্পে।এই মুহূর্তে সবচেয়ে কম টাকা খরচ করে তুরস্ক ঘুরে আসা যাবে।বর্তমানে ১তুর্কি লিরা=১৩.১৫ বাংলাদেশী টাকা।

চলতি বছর ব্রিটেন থেকে তুরস্কের ভ্রমণের হার ৬৪ শতাংশ বেড়েছেএক ডলার খরচ করে আগে যতটা তুরস্কের মুদ্রা পাওয়া যেতো এখন তার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া যাবে। ফলে পর্যটকদের খরচ কমে আসবে।২০১৬ সালে তুরস্কে বেশ কিছু সন্ত্রাসী হামলার পর দেশটির পর্যটন শিল্পে যে মন্দা দেখা দিয়েছিল সেটি এবার কেটে গেছে।ব্রিটেনের আরেকটি ভ্রমণ আয়োজনকারী কোম্পানি টিইউআই বলেছে বর্তমানে তুরস্ক, পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।গ্রীষ্মকালে ব্রিটেনের মানুষ যেসব জায়গায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করে, তার মধ্যে তুরস্কের অবস্থান উপরের দিকে আছে।
কিন্তু ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তুরস্কে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কয়েকটি জায়গায় না যাওয়ায় পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ তালিকায় তুরস্ক তিন নম্বর ক্যাটাগরিতে রয়েছে। সে অঞ্চলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের পুনরায় বিবেচনা করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

➡এই মুহূর্তে তুরস্কের বন্ধু কে?
তুর্কির এই বিপদে এগিয়ে এসেছে সৌদির সঙ্গে বিবদমান কাতার। তুর্কির বিপদে সাহায্য করে তাকে নিজেদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করা কাতারের জন্য স্বাভাবিক। তাৎক্ষণিক সেখান থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার তুর্কির ব্যাংকিং সিস্টেমে সরবরাহ করায় প্রথম ধাক্কা সামলানো গেছে। রাশিয়া বা চীন এখন পর্যন্ত কিছু না বললেও তুর্কির পক্ষে কথা বলেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোন। তারা বলেছেন, তুর্কির স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র তাদের এই একটা কথায় লিরার দাম ৪ শতাংশ বেড়ে যায়!!

ইউরোপিয়ান নেতাদের সমর্থনের কারণ রয়েছে।সিরিয়ান শরণার্থীদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে তুর্কির মধ্যে আটকে রেখেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। প্রয়োজনের সময় সহায়তা না পেলে শরণার্থীদের ছেড়ে দিতে পারে তুরস্ক।তা করলে ইউরোপে আবারও দেখা দেবে শরণার্থী সংকট।তখন বাংলা প্রবাদ “ঠেলার নাম বাবাজি” টের পাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।তারা চাপ দিবে যুক্তরাষ্ট্রকে।

➡যুক্তরাষ্ট্রের বিপদ:
চাপে আছে আমেরিকা নিজেও। তুর্কির সঙ্গে বাড়াবাড়ি করলে সে ন্যাটো থেকে বেরিয়ে গিয়ে সরাসরি যুক্ত হবে চীন, রাশিয়া, ইরানের সঙ্গে। শত্রুপক্ষ ভারি করে এমন পরিস্থিতি চাইবে না আমেরিকা। কিছুদিনের মধ্যে তুর্কির সঙ্গে একটা সমঝোতায় চলে আসা তাদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।অন্যথা হলে সুযোগটা লুফে নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা চীনের জন্য হবে পোয়াবারো। তুর্কির মতো অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির দেশ চীন রাশিয়া, ইরানের সঙ্গে যুক্ত হলে বদলে যাবে সাম্রাজ্যবাদীদের সব অঙ্ক।এক ধাক্কায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতাগিরি শেষ হয়ে যাবে।

➡বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়:
তুর্কির অর্থনৈতিক সংকট থেকে শিক্ষণীয় আছে বাংলাদেশের। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ বেড়েই চলেছে। বেড়ে চলেছে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য আমদানি, সেই সঙ্গে নিয়মিত চাহিদা কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি। বৈদেশিক ঋণ কোন কোন খাতে নেওয়া হবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।বিলাসদ্রব্য আমদানিকারকরা যেন কোনোভাবেই বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণের সুযোগ না পায়। যতটা সম্ভব বন্ধ করা দরকার বিলাসদ্রব্যের আমদানি। বিগত অর্থবছর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালান্স অব পেমেন্টে সাত বছর পর ৮৮৫ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর আগে সর্বশেষ এমন ঘাটতি হয়েছিল ২০১০-১১ অর্থবছর শেষে।

তবে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ ঋণের কিস্তির টাকা দিতে ব্যর্থ হয়নি। বিশ্ববাসীর কাছে দেশের মান বজায় রাখতে হলে এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। তার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া ঋণগুলো সময়মতো পরিশোধের ব্যবস্থা রাখতে হবে এখন থেকেই। নইলে তুর্কির মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আমাদেরও।তুরস্ক বড় অর্থনীতি ও সামরিক শক্তির দেশ। তার অর্থনীতি ভেঙে পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউরোপ-আমেরিকা।নিজেদের স্বার্থেই তাকে উদ্ধার করার জন্য তৈরি আছে পৃথিবীর সব ক’টা বড় অর্থনীতি।

কিন্তু আমাদের কে দেখবে?
ভারত?
মায়ানমার?
থাক ভাই,আর হাসাতে চাই না আপনাকে 😂

প্রতীকী ছবিতে তুর্কি স্পেশাল ফোর্স মেরুন বেরেট ও তুর্কি ফিমেল সোলজার।

error: Content is protected !!