স্টাফ রিপোর্টার>>>
রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানমের হাতে পরিষদের এক সদস্য লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে।
মঙ্গলবার এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ পরিষদ সদস্যরা চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে তারা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয় জেলা পরিষদ ভবনে।
খবর পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, মহানগর কমিটির সভাপতি শাফিউর রহমান শাফিসহ দলের সিনিয়র নেতারা ঘটনাস্থলে আসেন। এরপর তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ সদস্যরা চেয়ারম্যানের কক্ষের তালা খুলে দেন।
পরে জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রায় ৩ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তার হাতে জেলা পরিষদ সদস্য পারভীন আক্তার লাঞ্ছিত হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে আখ্যায়িত করেন।
এরপরও জেলা পরিষদ সদস্যরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান প্রায় সময় পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে থাকেন। তিনি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে এভাবে ব্যাহত করে থাকেন।
এরপর আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর অনুরোধে পরিষদ সদস্যরা শান্ত হন। তিনি পরিষদ সদস্যদের মিলেমিশে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সরকারের উন্নয়ন যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন তিনি।
রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, তারা দুজনেই দলের নেত্রী। তাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা দুঃখজনক। আর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়া হয়েছে। বুধবার থেকে জেলা পরিষদের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে বলে তিনি আশা করেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকালে রংপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য পারভীন আক্তার চেয়ারম্যানের কাছে দাফতরিক কাজে গেলে চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ের তার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। এ ঘটনা হাতাহাতির পর্যায়ে গেলে পারভীন আক্তারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মহানগর কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রংপুর জেলা পরিষদের সদস্য আবুল কাশেম ও সেলিনা আক্তার জানান, বিকাল পৌনে ৫টার দিকে সদস্য পারভীন আক্তার চেয়ারম্যানের কক্ষে আসেন। একটি প্রকল্প সংশোধনীতে স্বাক্ষরের ব্যাপারে অনুরোধ করলে চেয়ারম্যান ছাফিয়া খানম অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এর প্রতিবাদ করলে ছাফিয়া খানম চেয়ার থেকে উঠে পারভীন আক্তারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ঘটনার পরপরই চেয়ারম্যান দ্রুত তার কক্ষ থেকে চলে যান।
এ ঘটনার পরপরই রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন পারভীন আক্তার।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের অপর সদস্য সিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, চেয়ারম্যান এর আগেও পরিষদের এক সদস্যদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছেন।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাফিয়া খানমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কাপড় ছেঁড়াছেঁড়ির ঘটনা ঘটেনি। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই ঘটনাটি ঘটেছে।