আজ

  • শুক্রবার
  • ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আসামিদের কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

আপডেট : অক্টোবর, ১০, ২০১৮, ১:০২ অপরাহ্ণ


সালাহ্উদ্দিন মজুমদার>>>
১৪ বছর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মামলার রায় আজ বুধবার। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করবেন।

হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ জমা দেয় পুলিশ। এর মধ্যে রাজনৈতিক নেতা আছেন ৮ জন, পুলিশের কর্মকর্তা ৮ জন, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আছেন ৫ জন এবং পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের ৩১ জন।

২২৫ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে বলেছেন, ২১ আগস্ট হামলার সঙ্গে জড়িত সব আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছে। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চান।

অবশ্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আসামিদের খালাস চান তাঁরা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির বহু নেতা-কর্মী আহত হন।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল হামলার প্রধান উদ্দেশ্য। এ ছাড়া জঙ্গি তৎপরতার সুযোগ করে দেওয়া, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করাও ছিল উদ্দেশ্য।

৮ রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। অপর সাতজন হলেন সাবেক মন্ত্রী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপি নেতা হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ ও কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

এই আট নেতার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে গ্রেনেড হামলা পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তা, প্রশাসনিক সহায়তা এবং গ্রেনেড সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বনানীর হাওয়া ভবন ও আবদুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়। এ বৈঠকে এই নেতারা অংশ নেন।

তারেকসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

পুলিশের ৮ জন
পুলিশের সাবেক তিনজন মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) আটজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেননি। হামলা করে জঙ্গিরা যাতে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে তাঁরা সহায়তা করেছেন। আর এ হামলার পর তদন্তের সময় প্রকৃত আসামিদের আড়াল করে তদন্ত ভিন্ন খাতে নিয়েছেন। নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

আট পুলিশ কর্মকর্তা হলেন সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক উপকমিশনার খান সাঈদ হাসান, সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান খান, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশীদ। আটজনের বিরুদ্ধে কর্তব্যকাজে অবহেলার অভিযোগের সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর।

সামরিক বাহিনীর ৫
এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থা জিজিএফআই এ এনএসআইয়ের সাবেক পাঁচ কর্মকর্তা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এঁদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও আদালতের অনুমতি ছাড়া মামলার আলামত ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়। ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহীমের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আর ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার এবং খালেদা জিয়ার ভাগনে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউকের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনাকারী মাওলানা তাজউদ্দীনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়। এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর।

জঙ্গি ৩১ জন
পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের ৩১ জন নেতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২২ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বনানীর হাওয়া ভবন, মোহাম্মদপুরে আবদুস সালাম পিন্টুর এবং জঙ্গিনেতা আরিফ হাসান সুমনের বাসভবন, মিরপুর এবং বাড্ডার বাসায় এ হামলার পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, গ্রেনেড মজুত রাখার অভিযোগ আনা হয়। পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন হলো হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি), লস্কর-ই-তাইয়েবা, হিযবুল মুজাহিদীন, তেহরিক-জিহাদি আল ইসলাম এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন। হত্যা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হুজির শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর) এবং আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দীন।

অপর ২৭ জঙ্গি হলেন শাহদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট, গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমদ, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে ওভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, আরিফ হাসান সুমন, রফিকুল ইসলাম ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ উজ্জ্বল ওরফে রতন, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, মহিবুল মোত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি আবদুল হাই ও রাতুল বাবু।

তদন্ত
আগস্ট হামলার মামলায় তদন্ত শেষে সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আদালতে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন। তাতে ২২ জনকে আসামি করা হয়। সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ছাড়া বাকি আসামিদের সবাই হুজি-বির জঙ্গি।

অধিকতর তদন্তের আসামি
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিআইডি এ মামলার অধিকতর তদন্ত করে এবং ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়। তাতে আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়। তাঁরা হলেন তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সাংসদ শাহ মোহাম্মদ কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার ভাগনে সাইফুল ইসলাম (ডিউক), এনএসআইয়ের সাবেক দুই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম ও মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি খান সাইদ হাসান ও মো. ওবায়দুর রহমান, জোট সরকারের আমলে মামলার তিন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আবদুর রশিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ এবং হুজি-বির ১০ জন নেতা।

কারাগারে থাকা ৩১ জন
১. সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর
২. সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু
৩. ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.)
৪. মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী
৫. এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম
৬. জঙ্গি শাহদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল
৭. মাওলানা শেখ আবদুস সালাম
৮. মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট
৯. আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম
১০. মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু উমর আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব
১১. মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির
১২. মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ
১৩. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে ওভি
১৪. মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর
১৫. আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল
১৬. মো. জাহাঙ্গীর আলম
১৭. হাফেজ মাওলানা আবু তাহের
১৮. হোসাইন আহমেদ তামিম
১৯. মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ
২০. আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক
২১. মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ
২২. মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন
২৩. হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও আবু বক ওরফে হাফে সেলিম হাওলাদার
২৪. লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক
২৫. সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা
২৬. সাবেক আইজিপি শহুদুল হক
২৭. সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী
২৮. তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন
২৯. সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান
৩০. এএসপি আবদুর রশীদ
৩১. সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম

ফাঁসি কার্যকর
১. জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ
২. জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান
৩. শহিদুল আলম বিপুল

পলাতক ১৮
১. তারেক রহমান
২. হারিছ চৌধুরী
৩. মাওলানা মো. তাজউদ্দীন
৪. মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন
৫. আনিসুল মোরসালিম ওরফে মোরসালিন
৬. মো. খলিল
৭. জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর
৮. মো. ইকবাল
৯. লিটন ওরফে মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের,
১০. কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ
১১. মো. হানিফ,
১২. মুফতি আবদুল হাই,
১৩. রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু
১৪. লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার
১৫. মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন
১৬. ডিআইজি খান সাঈদ হাসান (সাবেক ডিসি পূর্ব)
১৭. পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খান
১৮. মুফতি শফিকুর রহমান

error: Content is protected !!