অফিস ডেস্ক>>>>
“নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলায় প্রতিবাদ, ব্যারিস্টার মইনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান
“নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলায় প্রতিবাদ, ব্যারিস্টার মইনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন প্রকাশ্য ক্ষমা না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।
গণমাধ্যমের সব ধরনের সুযোগ থেকে মইনুল হোসেনকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাঁকে না রাখার দাবি জানিয়েছেন নারী সাংবাদিকেরা। নারী সাংবাদিকদের এ সংবাদ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলায় প্রতিবাদ, ব্যারিস্টার মইনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’
চরিত্রহীনদের মুখোশ খুলে দেওয়ার কথা জানিয়ে নাসিমুন আরা হক বলেন, নারীর চরিত্র রক্ষার দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। নারীর চরিত্র নারী নিজে রক্ষা করতে পারবেন। আমরা যাদের চরিত্রহীন বলে জানি, তাঁদের মুখোশ খুলে দিতে শুরু করব। হলিউডে, যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্যে, ভারতে শুরু হয়েছে, আমরা বাংলাদেশেও কিন্তু চুপ থাকব না।
১৬ অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে কথা বলার একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে ক্ষমা চান।
মাসুদা ভাট্টি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে তাঁর কাছে বুধবার ক্ষমা চান মইনুল হোসেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ক্ষমা করলেও মইনুল হোসেন অগণিত নারীকে অপমান করেছেন। জনসম্মুখে এ ঘটনা হওয়ায় তাঁকে অপরাধ স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ক্ষমা না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান মাসুদা ভাট্টি।
নারীরা আজ নীরব নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সোচ্চার মন্তব্য করে কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, নারীর চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তাঁদের জানা থাকা দরকার, বেশি হইচই করলে থলের বিড়ালটা কিন্তু বেরিয়ে পড়বে অচিরেই।
মইনুল হোসেন সব সময় দাম্ভিকতার সুরে কথা বলেন অভিযোগ করে গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, মইনুল হোসেনকে কোনো টকশোতে তিনি রাখতে চান না। মইনুল হোসেন এখন গণশত্রু। প্রকাশ্য ক্ষমা চাইলেও মইনুলকে ক্ষমা করা যায় না।
মইনুল হোসেনের বিচার দাবি করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, মইনুল হোসেন যে কথা বলেছেন, এ ধরনের মনমানসিকতার লোক অনেকেই আছেন। আমাদের অনেকে সংবাদমাধ্যমে দাপিয়ে বেড়ান। নারীরা কথা বললে তাদের কথা বলতে দেন না।
রাজনৈতিকভাবে কলঙ্কিত ব্যক্তিদের হুঁশিয়ারি করে দিয়ে সাংবাদিক মুন্নী সাহা বলেন,তাঁরা যখন হেরে যাবেন তখন তাঁদের শেষ অস্ত্র নারী। নারীর চরিত্র আছে কী নেই তা নিয়ে তাঁরা বলতে থাকবেন। নারীরা তাঁদের কাজ করতেই থাকবেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং যারা নানা সময়ে রাজনৈতিকভাবে কলঙ্কিত, তাঁরা একটু সাবধান থাকবেন। এই প্রতিবাদ সকল রাজনৈতিক চরিত্রহীনদের বিরুদ্ধে নারীর প্রতিবাদ। যারা রাজনীতি করবেন, জাতীয় ঐক্য করবেন, নানা রকমের ঐক্য করছেন, নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন, এই প্রতিবাদ একটু মাথায় নিয়েই মাঠে নামবেন।
চিকিৎসক নুজহাত চৌধুরী বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের ক্ষমা চাওয়ার যে দাবি করা হয়েছে তাঁর সঙ্গে তিনি দ্বিমত পোষণ করছেন। মইনুল হোসেন যে আচরণ করেছেন তা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাঁর শাস্তি কামনা করছেন তিনি। দেশবাসীকেও মইনুল হোসেনের বিচার করতে বলেন নুজহাত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, সবাই এখানে একত্রিত হয়েছেন, এই প্রতিবাদ, এই ক্ষোভ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। আমাদের ক্ষোভটা সমাজের পরিবর্তনের জন্য। সবাই আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করবেন।