
স্টাফ রিপোর্টার>>>ওমর আলম
ফেনী সদর উপজেলার শর্শদীতে শিশু প্রিয়াংকার ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শর্শদী এলাকার একটি জঙ্গল থেকে নির্যাতনকারী শাহেনা বেগম শাহেনীকে আটক করা হয়। এসময় তার সহযোগী মুন্নি আক্তারকেও আটক করা হয়। পরদিন বুধবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আটক করা হয় অমৃত দাস ও মো. আবদুল্লাহ নামে দুই কবিরাজকে। এঘটনায় মোট চারজনকে আটক করা হয়। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশুটি নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানায়।
বুধবার বিকেলে ফেনীর পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সাংবাদিকদের জানায়, এক বছর বয়সে সিলেটের সুফিয়া নামে এক মহিলা থেকে প্রিয়াংকাকে দত্তক নেয় শাহেনা। গত ১৫দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসে তখন প্রিয়াংকার অদ্ভুত আচরণ দেখে শর্শদী বাজারের লন্ড্রী দোকানদার অমৃত দাস ও আবদুল্লাহ নামে দুই কবিরাজ প্রিয়াংকাকে ঝাঁড় ফোক ও মোমবাতির ছ্যাকা দিয়ে চিকিৎসা দেন এবং পরবর্তীতে কবিরাজদের কথামতো শাহেনাও তাকে প্রতিদিন মোমের ছ্যাকা দিত। গত মঙ্গলবার প্রিংয়াকা বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির একজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে শাহেনী আক্তারসহ চারজনকে আটক করা হয়।
সূত্র জানায়, আটককৃত আসামী শাহানা আক্তার শাহেনী বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের অভিনেত্রী ছিলেন। তাঁর সাথে শিশু প্রিয়াংকা পালিত মেয়ে হিসেবে থাকত। মেয়েটির শরীরে মোমবাতির আগুন দিয়ে ছ্যাকা দিয়ে নির্যাতন চালাতো শাহেনী। শিশুটির আর্তচিৎকারে হাসতো অভিনেত্রী শাহেনী। সরেজমিনে দেখা যায়, মেয়েটির শরীর যেন প্লাস্টিকের, মোমবাতির আগুনে সারা শরীর ছিদ্র হয়ে গেছে। মেয়েটির গায়ে আগুনের ছ্যাকা দিয়ে জ্বিন তাড়ানোর নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করতো বলে জানান স্থানীয়রা।
নির্যাতনের শিকার শিশু প্রিয়াংকা ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মেয়েটির ওপর নির্যাতনের আলামত খুঁজে পায়। আটকের পর নির্যাতনকারী শাহানা আক্তার শাহেনী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করে বলেন, তার ওপর জ্বিন ভর করতো সে সময় প্রিয়াংকার শরীরে আগুনের ছ্যাকা দিলে জ্বিন চলে যেত। আর সে কারণেই তাকে তিনি আগুনের ছ্যাকা দিতেন। তিনি আরো জানান, বাংলা চলচ্চিত্রের ৪৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বিগত ৪ বছর তিনি অভিনয় থেকে দূরে সরে এসেছেন।
এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ছুটে যান। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল ও ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ। এসময় পুলিশ সুপার ঘোষণা করেন যত শিগগির সম্ভব নির্যাতনকারীকে গ্রেপ্তার করা হবে। পরে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে শর্শদী এলাকার একটি জঙ্গল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শর্শদি ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা জানান, মেয়েটি ওই এলাকার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহেনী বেগমের বাসায় থাকতো। শাহেনী পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে এ বাড়িতে আসতেন।
ওই এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শাহেনী তার বোন, বাংলা চলচ্চিত্রের পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেত্রী ছিল সে। বেপরোয়া জীবন যাপনের কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শাহেনী। স্বামীর সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই।
ফেনী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়জুল কবির বলেন, শিশুটির শরীরে অসংখ্য পোড়া ক্ষতস্থান রয়েছে। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। যেহেতু মেয়েটির কোনো স্বজন নেই সেহেতু মেয়েটির দেখাশোনা করছে স্বেচ্ছসেবী সংগঠন ‘সহায়’।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ শিশু নির্যাতনের ঘটনায় শাহানা আক্তার শাহেনীসহ চারজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য; মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের পাঠানবাড়ি সংলগ্ন সড়কে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে শিশু প্রিয়াংকাকে কাঁদতে দেখে তাকে বাড়ি নিয়ে যান জোহরা আক্তার। পরে স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শে তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।