আজ

  • বৃহস্পতিবার
  • ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কৌশলগত কারণে প্রধানমন্ত্রী ত্বকী হত্যার বিচার করছেন না: আইভী

আপডেট : অক্টোবর, ২৭, ২০১৮, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ


অফিস ডেস্ক>>>

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্টের হত্যার বিচার করেছেন, শেখ রাসেলের হত্যার বিচার করেছেন। তাহলে ত্বকীর বিচার করতে বাধা কোথায়? আমার তো মনে হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো বাধাই বাধা নয়। যে কোনো কৌশলগত কারণে উনি (প্রধানমন্ত্রী) হয়তো এখন করছেন না (ত্বকী হত্যার বিচার), কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস উনি করবেনই করবেন।’

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর ২৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আইভি আরও বলেন, ‘আমি যতটুকো ওনাকে (প্রধানমন্ত্রী) চিনি, কাছ থেকে দেখেছি, ওনার অসম্ভব ধরনের সফট কর্নার ত্বকীর প্রতি এবং উনি নিজেও বলেছেন ত্বকী হত্যার বিচার হতেই হবে। যে কোনো কারণেই হোক এই বিচারটা পিছিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা জানি কেন পিছিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা পেছাতে চাই না। সারা বাংলাদেশে বিচারহীনতা যেমন আছে, তদ্রুপ বিচার যে হয়েছে তেমনি উদাহরণও আছে। সাত মার্ডারের যদি বিচার হতে পারে, তাহলে ত্বকীর হত্যার বিচার নয় কেন?   ‘জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা’১৮ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান’ এর আয়োজন করে ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’।  এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সাংবাদিক কামাল লোহানী, ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বী প্রমুখ।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সূত্রপাত ২০১৩ সালের ৬ মার্চ। ওইদিন বিকালে বাসা থেকে বেরিয়ে রাতে আর বাসায় ফেরেনি তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। একদিন পর ৮ মার্চ সকালে শহরের চারারগোপে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

ত্বকীর বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে মেয়র আইভী বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ও (ত্বকী) জানত যে ওর মৃত্যু হবে। এই যে একটা ১৭ বছরের বাচ্চা এভাবে লিখতে পারে আমার নিজের কাছেই আশ্চর্য লাগে। তাই ও বেঁচে থাকলে বিখ্যাত হতো। আর ওকে যারা কেড়ে নিয়েছে ভেবেছিল, হয়তো নারায়ণগঞ্জ স্তব্ধ হয়ে যাবে। 

আইভী বলেন, কিন্তু নারায়ণগঞ্জ তো স্তব্ধ হয়নি, বরং সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্বে বাঙালিরা যেখানে বসবাস করে তারাও আজকে প্রতিবাদ করছে। ত্বকী আমাদের সাহস দিয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জ তো দীর্ঘদিন স্তব্ধ ছিল। বারবার ঘুরে ফিরে যাদের কথা আসছে, যারা ত্বকীকে হত্যা করেছে সেই পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো সাহস নারায়ণগঞ্জের অনেকেরই ছিল না। কিন্তু ত্বকী আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছে।’ 

মেয়র আইভী আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জবাসী আমরা স্বস্তি চাই, বাঁচতে চাই, আমরা আমাদের সন্তাকে উন্মুক্ত মাঠে খেলা করাতে চাই, আমরা শহীদ মিনারে যেতে চাই নির্ভয়ে, আমরা চাষাঢ়া ঘুরতে চাই নির্ভয়ে, আর শীতলক্ষ্যার পাশে নদীতে নির্ভয়ে ঘুরতে চাই, আমরা লাশ দেখতে চাই না। যদি আশিক হত্যার বিচার হতো, তাহলে ত্বকী হত্যা হতো না। যদি এর আগে যত হত্যা হয়েছে সেসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হতো তাহলে ত্বকী হত্যা হতো না। ত্বকী হত্যার প্রতিবাদ হয়েছে বলেই, নারায়ণগঞ্জের অনেকের প্রাণরক্ষা পেয়েছে। নাহলে বহু মানুষের প্রাণ যেত। আজকে ত্বকী মঞ্চ দাঁড়িয়ে আছে বলেই অনেক কিছু থেকে নারায়ণগঞ্জবাসী রক্ষা পেয়েছে।’

অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘এই ত্বকীর (হত্যা) প্রতিবাদে আমরা ত্বকী মঞ্চ করে একসঙ্গে প্রতিবাদ করতে করতে অনেকেই নারায়ণগঞ্জে কথা বলে। ত্বকী আমাদের কথা শিখিয়েছে, ত্বকী অবশ্যই আমাদের সাহসের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে যারা আছেন আমি সবাইকে অনুরোধ করব সাহসী হওয়ার জন্য। সবাই এখানে অনেক কথা বলেছে, কিন্তু সাহসী না হলে এই দেশে কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ যারা প্রভাবশালী, যারা ক্ষমতায় বসে এবং ক্ষমতার এই প্রশাসনকে ব্যবহার করে শক্তিশালী হয়, তাদের রুখতে হলে আমাদেরকে শক্তিশালী হতে হবে।’
আইভি আরও বলেন, ‘ত্বকী শুধু নারায়ণগঞ্জের মধ্যে নয়, ত্বকী এখন সারা বাংলাদেশে এমনকি বহির্বিশ্বে যেখানে বাঙালিরা আছে সেখানে ছড়িয়ে গেছে। ত্বকী বিখ্যাত হতে পারত, যদি বেঁচে থাকত।  একজন মেধাবী শিক্ষার্থী থেকে একটা বিশাল কিছু হতো এই বাংলাদেশে। কিন্তু মৃত্যু ওকে বিখ্যাত করে গেছে। মারা যাওয়ার আগে যে কবিতাগুলো লিখে গেছে, সেগুলো পড়লে মনে হয় না যে এগুলো ওর কবিতা, ও লিখতে পারে এভাবে। কারণ ও মৃত্যুকে যেন আলিঙ্গন করেছে।’

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ৫ বছর হয়ে গেল সর্বত্রই ত্বকী হত্যার বিচার চাওয়া হয়েছে। আমরা একটা সময় খুবই আশা করেছিলাম যে ত্বকী হত্যার বিচার হবে। কিন্তু আমাদের সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান করছি, ত্বকী হত্যার বিচারের উদ্যোগটা যেন তিনি নেন। 

তিনি আরও বলেন, ৫ বছর হয়ে গেছে ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি। একটি অন্যায়কে আরেকটি অন্যায় দিয়ে চাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এটা যাতে সফল না হয়, যেন ত্বকী হত্যার বিচার হয়।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘ত্বকীর যারা হত্যাকারী তাদের বিচার হচ্ছে না। আমরা একটা বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যে বাস করছি। সেই বিচারটা হচ্ছে না। কারণ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী পর্যায়ের যে বাধাটা আসছে বিচারে, সেটার কারণে বিচারটা হচ্ছে না। মিয়া শফিকুল ইসলাম স্পষ্ট করে যে কথাটা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার অনীহার কারণের রাব্বীর (ত্বকীর বাবা) পুত্রের বিচার হচ্ছে না। হতে পারে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, তিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা অনেকেই তাকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করি। সবকিছুরই একটা বাস্তবাত আছে। কিন্তু এ দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমাদেরতো দায় নাই এই হত্যাকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকতাকে সমর্থন দেখানো।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘ত্বকীর বিচার আমরা দাবি করে যাব।’

error: Content is protected !!