
স্টাফ রিপোর্টার>>>সোলায়মান মাহদী
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম। ফেনী আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকলেও কখনও ভোটে প্রার্থী হননি তিনি। এবার তিনি ভোটের মাঠে নামায় ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সরে দাঁড়িয়েছেন। শুধু তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে ফেনীর রাজনীতিতে সৃষ্টি হলো এক নতুন মেরুকরণ।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল- টানা পাঁচবার ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া) আসন থেকে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। ফেনী বরাবরই বিএনপি অধ্যুষিত। বিএনপিবিহীন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসন থেকে জয়ী হন জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন আলাউদ্দিন নাসিম। এতদিন মনোনয়ন প্রত্যাশী যে তিন আওয়ামী লীগ নেতা মাঠে ছিলেন, গতকাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় তারা আলাউদ্দিন নাসিমের সঙ্গে ছিলেন। সমর্থনও জানিয়েছেন তাকে। ফেনী-২ আসনে প্রার্থী হতে একই সময়ে দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ নিজাম উদ্দীন হাজারী। তিনিও সমর্থন জানিয়েছেন আলাউদ্দিন নাসিমকে।
কারাবন্দি খালেদা জিয়া এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তিনি ভোটে অংশ নিতে পারলে অন্য দলের এ আসনে জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই ধরা হয়। তাই আলাউদ্দিন নাসিমের প্রার্থী হওয়াকে রাজনৈতিক ‘সংকেত’ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কারণ,এর আগে দলীয় নেতা- কর্মীদের অনুরোধেও প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসতে অনীহা ছিল আলাউদ্দিন নাসিমের। তাকে ফেনী আওয়ামী লীগের অভিভাবক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেন নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমানও একই কথা বলেছেন। তিনি সমকালকে বলেছেন, গত ১০ বছরে ফেনীর উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা তার।
সূত্রেঃ দৈনিক সমকাল, শাহজালাল রতন ও সুমন
আলাউদ্দিন নাসিম সমকালকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাকে জানিয়েছিলেন তিনি প্রার্থী হলে কেউ মনোনয়নপত্র কিনবেন না। সবাই কথা রেখেছেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে তিনি ফেনী-১ আসন আওয়ামী লীগকে উপহার দিতে পারবেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় আলাউদ্দিন নাসিমের সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার তপন, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ। তারাও আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় আলাউদ্দিন নাসিমকে সমর্থন জানিয়ে সঙ্গে ছিলেন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম মজুমদার, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল মজুমদার, ছাগলনাইয়া উপজেলার চেয়ারম্যান সোহেল হায়দার চৌধুরী, পৌর মেয়র মোহাম্মদ মোস্তফা।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়া প্রার্থী হলেও আলাউদ্দিন নাসিমের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব খালেদা জিয়াকে ভোটে হারানো। তবে অন্য মতও রয়েছে। ফেনী যুবলীগ সভাপতি আজহারুল হক আরজুর দাবি, আলাউদ্দিন নাসিমের পক্ষে খালেদা জিয়াকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকার সুযোগ নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হতে চান তিনি। আরজুর অভিযোগ, আলাউদ্দিন নাসিমের কূট-রাজনীতির ফলে ফেনী আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী দলের বাইরে। তিনি দলের ক্ষতি করেছেন।
ফেনীর রাজনীতির গভীরের খবর রাখেন এমন একজন হলেন অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক। তিনি জানান, গত তিন দশকে ফেনীর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন জাতীয় পার্টির মন্ত্রী জাফর ইমাম, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জয়নাল হাজারী, খালেদা জিয়ার প্রয়াত ভাই সাঈদ এস্কান্দারের মতো নেতারা। এখন এ ভূমিকায় রয়েছেন আলাউদ্দিন নাসিম।
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথ বাহিনীর অভিযানে জয়নাল হাজারী ভারত পাড়ি জমালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয় বলে জানান স্থানীয় নেতারা। তাদের তথ্যানুযায়ী,জয়নাল হাজারীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন তারই এক সময়কার অনুসারী নিজাম হাজারী। তাকে সমর্থন করেন আলাউদ্দিন নাসিম ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।পরে ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় নিজাম হাজারীর। আলা- উদ্দিন নাসিম ফেনীর রাজনীতির একক নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জয়নাল হাজারী ও ইকবাল সোবহান চৌধুরীর প্রবেশ কঠিন হবে।
সূত্রেঃ দৈনিক সমকাল. শাহাজালাল রতন ও সুমন।