আজ

  • মঙ্গলবার
  • ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
  • ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পবিত্র কারামুক্তি দিবস আজ আমার:সাংবাদিক ,ড.কনক সরওয়ার

আপডেট : নভেম্বর, ১৭, ২০১৮, ৫:৫৮ অপরাহ্ণ


অফিস ডেস্ক>>>
এক সময়ের একুশে টেলিভিশনেের জনপ্রিয় জনতার কথা,উপস্থাপন করেই জনতার মাঝে স্হান করে
নেন ড.কনক সরওয়ার, জন্ম স্হান ফেনী।
সুদূর আমেরিকা থেকেই তিনি তার পেইজে এইভাবেই…….
ড.কনক সরওয়ার: তিন বছর পূর্ণ হলো। পবিত্র বলছি কারণ বিনা কারণে কেউ জেলে গেলে পাপ কাটা যায়, মানুষ ‘পবিত্র’ হয়ে বের হয়! ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর রাত ১২টার কিছু আগে নয় মাস পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রচন্ড আতঙ্ক,উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা নিয়ে বের হয়ে আসি। উচ্চ আদালতের জামিন আদেশের পরও মনে হচ্ছিল বের হলেই আবার আটক করবে? বিকেল থেকেই জেল গেটে বসে আছি মুক্তির অপেক্ষায়,জেল কর্তৃপক্ষ একের পর এক ফোনে বিভিন্ন এজেন্সী আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাচ্ছেন আমার মুক্তি আদেশের খবর, জানতে চান ছাড়বেন কিনা? আর কোন অভিযোগ আছে কি না? এক পর্য়ায়ে মনে হলো , বের না হওয়াই ভালো, আবার যদি এরেস্ট করে, আবার রিমান্ড; কি করে? কি মামলা দেয়? এক ভয়ংকর বর্ণণাতীত সময়! প্রতিটি সেকেন্ড হিমালয়ের মতো ভারী ; সমুদ্রের মতো অতল! ভাবলে এখনো দমবন্ধ হয়ে আসে!! উচ্চ আদালতের জামিনের পর ও আপনি বের হয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা কোন নিশ্চয়তা নেই। আওয়ামী শাসনকাল এমনই ভয়ংকর-জাহেলিয়াত।

জেলের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বললেন, আপনার মতো একজন ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’কে ছাড়ার আগে যদি সব জায়গায় না জানাই তাহলে আমার চাকরি থাকবে না! পরে জানলাম যে কোন রাজনৈতিক মামলাতেই সব গোয়েন্দা সংস্থা এবং মামলাধীন থানাকে জানাতে হয় মুক্তির আগে-কি অদ্ভুত নিয়ম? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত বারে বারে গ্রেপ্তার হতে থাকে কেউ কেউ আবার গ্রেপ্তার হয়ে নিখোঁজের তালিকায় নাম লেখায়- এই যদি হয় অবস্থা তবে আদালত-উচ্চ আদালতের রায়ের কি দরকার? আমার মনে হয় এরশাদ আমলের ডিটেনশন অনেক ভালো ছিল বর্তমান অবস্থা থেকে!সরকার যাকে পছন্দ করে না তাকে ধরে এক,দুই বা তিন মাসের ডিটেনশন দিল যে কয় মাসই দিক বের হওয়ার পর আর কোর্ট-কাচারি নেই। বর্তমান সময়ে আমার বা রাজনৈতিক বন্দীদের ঝামেলা অনেক বেশি মাসে মাসে কোর্টে হাজিরা দাও, উকিল ধরো, পুলিশ ধরো,চার্জশীটের অপেক্ষা করো,বিচারের অপেক্ষা করো কত কিছু… এরশাদ যদি ৮৯/৯০ সালে এই দুঃশাসনের অর্ধেক ও করতো তবে হয়তো এখনো টিকে থাকতো ক্ষমতায়! স্বৈরাচারী এরশাদ কে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর আমাদের এখন মনে হচ্ছে এই গণতন্ত্রের চেয়ে এরশাদের স্বৈরাচার অনেক শান্তির ছিল?!! কি অদ্ভুত অবস্থা !

দুই. জেলের স্মৃতি আমি লিখতে পারি না, লিখতে বসলেই আমি যখন সে দিন গুলোতে যাই আমি অস্থিরতায় ভুগি, জেলের মতোই ‘ক্লাসট্রোফোবিয়া’য় আক্রান্ত হয়ে দম বন্ধ হয়ে আসে।কি ভয়ঙ্কর একাকীত্ব-অসহায় দিন।পশুর মতো জীবন! তবে তারপরও বলবো জেল জীবন আমার কাছে প্রি-ডেথ এক্সপিরিয়েন্স ! মানুষের কত রকম চেহারা, আমার পরিবারের অসহায়ত্ব,বাড়ীওয়ালার বাড়ী থেকে উচ্ছেদ, সন্তানের স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া, হঠাৎ টাইফয়েডে আক্রান্ত স্ত্রী র হাসপাতালে এডমিট হয়ে চিকিৎসার অসামথ …. পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আমি; মা-বাবা ও বেঁচে নেই .. সপ্তাহ দশদিন পরপর নানা খবর পাই কিন্তু আমার কিছু করার নেই যেনো আমি বোধ শক্তিহীন ; অথর্ব- পঙ্গু। আমি বরাবরই টাকা-পয়সা বা বৈষয়িক বিষয়ে উদাসীন। উদাসীন মানে ভবিষ্যতের ভাবনা আমার কম। পরের মুহুর্তে বেঁচে থাকবো কিনা তার নিশ্চয়তা নেই- আবার ভবিষ্যতের চিন্তা! নিজের বেতন আর বিজ্ঞাপনের কিছু কাজ করতাম বৈধ ভাবে তাতেই আমি খুশি ।বিলাসিতার কিছু ছিল না আমার জীবনে ! হাতে ওইভাবে কোন জমানো টাকা নেই ,হঠাৎ করে চলে গেলাম জেলে ;কি যে অবস্থা এটা বোঝানো খুব কঠিন । কিন্তু তারপরও ব্যবস্থা হয়ে যায়- সমস্যা র সমাধান হয়, একটি দরজা বন্ধ হলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো হাজারটা দরজা খুলে দেন! সমস্যা র সমাধান হয় আর রেখে যায় বিস্তর গভীর জ্ঞান- যার পুস্তক কোথাও নেই! কিন্তু তারপরও বলতে হয়, জেলের ভেতরে এবং বাইরে আমার কিছু বন্ধু-স্বজনকে অপ্রত্যাশিত যেভাবে পাশে পেয়েছি এক জীবনে তাদের ঋণ শোধ হবেনা! এটা স্বপ্নের মতো রঙিন, জোছনার মতো স্নিগ্ধ- রুপালি; হাফ বয়েল করা ডিমের কুসুমে এক চিমটি লবন দিয়ে খাওয়ার মতো সুখের! হা হা হা

তিন. আওয়ামী জাহেলিয়াতের পতন আসন্ন। এককালের প্রতাপশালী একনায়ক -শাসক এরশাদ বাঘা বাঘা নেতাদের লেজে খেলিয়েছেন, গৃহপালিত বিরোধী দল ও বানিয়েছিলেন,কি নির্মম পরিহাস ভাগ্যের ,এখন এরশাদ নিজেই সংসদের সং; পোষা বিরোধীদল। রাজনীতিবিদদের লেজেখেলানো এরশাদ এর নিজের অবস্থা এখন লেজেগোবরে!একটা হাস্যকর এবং বিরক্তিকর ক্লাউনে পরিণত হয়েছে! যে পরিমান দুর্বৃত্ত, সম্পদ লুন্ঠন কারী, শোষক, ঘাতক, নির্যাতক, পৃষ্ঠপোষক গত ১০ বছরে মহান মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে, পশ্চিম পাকিস্তানীদের চেয়েও বড় জাহেলিয়াত কায়েম করেছে তাদের পরিণতি যে ভয়াবহ একথা বলাইবাহুল্য। বাংলাদেশের দন্ডবিধি র কিছু ধারায় বিধান আছে, সমাজে জাহেলিয়াত সৃষ্টি কারী দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ কোমরে রশি বেঁধে ‘জনগনের সামনে দিয়ে তাহাকে হাটাইয়া থানায় লইয়া যাইবে‘ যেনো অন্যরা দেখে ভয় পায়- সতক হয়; আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, কাদের- নাসিম-হাছান-কামরুল-তোফায়েল-আনিছুল গং সবার কোমড়ে শক্ত রশি ; রাস্তার দুপাশে লাখো জনতা, থুতু ছিটাচ্ছে আর জাহেলিয়াতের একেক অধিপতি চিৎকার করে একজন আরেক জনের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে; সবার আগে ওবায়দুল কাদের চিৎকার করে বলছে, ‘ আঁই কিচ্ছি??!!

পুনশ্চঃ ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি রাতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ভাষণ একুশে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। একুশের চেয়ারম্যান এর পরদিনই গ্রেপ্তার হন। আমাকে এ সম্প্রচারে অভিযুক্ত করে মার্চ মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ আনা হয় রাষ্ট্রদ্রোহের।পুলিশ চার্জশীটে বলেছে এই প্রচারের মাধ্যমে আমরা পরস্পরের যোগসাজশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলাম। হায়!!!!

error: Content is protected !!