আজ

  • শুক্রবার
  • ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নৌকাকে জয়ী করতে পুলিশ-প্রশাসনের ‘গোপন’ বৈঠক, রিজবী

আপডেট : নভেম্বর, ২৫, ২০১৮, ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ


স্টাফ রিপোর্ট>>>ওমর আলম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত গোপন বৈঠক চলছে। প্রশাসন ও পুলিশের ‘বিতর্কিত ও দলবাজ’ কর্মকর্তারা জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী দাবি করেন, ২০ নভেম্বর রাতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চারতলার পেছনের কনফারেন্স রুমে এক গোপন বৈঠক হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ সচিব (প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক ডিজি) কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার আলী আজম (মহানগরী রিটার্নিং অফিসার), প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ কাজী নিশাত রসুল।
এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব, ডিএমপি ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। রাত সাড়ে সাতটা থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ বৈঠকে সারা দেশের ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেটআপ ও প্ল্যান রিভিউ’ করা হয়।

বৈঠকে পুলিশের ডিআইজি হাবিব বলেন, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫টিতে কনটেস্ট হবে, বাকি আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উতরানো যাবে না।

রিজভী আরও দাবি করেন, বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে। যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবে না। ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম-খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

তিনি বলেন, সে আলামত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে যশোর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, বৈঠকে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালানো হবে নির্দয়ভাবে, যেন ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে। আর যদি ধানের শীষের অনুকূলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জেতানো হবে। বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়ায় তা রিলে করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপর নির্মমভাবে সব ঠাণ্ডা করা হবে।
জেলার ‘উপদেষ্টা’ সচিবদের বাদ দেয়া হলেও তারা গোপনে মনিটরিংয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন রিজভী।

তিনি বলেন, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এরপর থেকে এ ধরনের সভা খুব বেশি করা যাবে না, তবে পরামর্শ করে কাজ করা হবে। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির নামে আসন্ন নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে আওয়ামী দলীয় আটজন কর্মকর্তা দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। সাবেক ও বর্তমান ৪৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার উপদেষ্টা (মেনটর) নিয়োগ করে যে নজিরবিহীন সরকারি আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এ বিষয়ে বিএনপির লিখিত আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু গোপনে ওই কর্মকর্তারা জেলায় জেলায় মনিটরিংয়ের কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে সারা দেশে ভোট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রথম তালিকার ছয়জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হল ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে।

রিজভী অভিযোগ করেন, কিছু দলবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকাণ্ড সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের এজেন্ডা নির্বাচন কমিশন কখনও প্রকাশ্যে, কখনও নীরবে-নিভৃতে বাস্তবায়ন করছে- এ অভিযোগ এখন সর্বত্র, ভূরি-ভূরি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরসন করতে সক্ষম হয়নি। মোদ্দা কথা, তফসিল ঘোষণার পরও আওয়ামী প্রশাসনিক দাপটের ছবি মোটেও বদলায়নি। কিন্তু কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে কতিপয় কমিশনার তাদের স্বপদে বহাল রাখতে তৎপর। বিতর্কিত নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে সরাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, গিয়াস কাদের চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য। এ জন্য তিনি কারাগারে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তাকে আটকের পর প্রথমে ডিভিশন দেয়া হলেও গতকাল তা বাতিল করে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কারাগারেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্যাতনের মুখে রাখতে হবে- এটাই এ সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই আইনি প্রক্রিয়ার নামে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভের পরও সেই আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে সরকারপক্ষ।

রিজভী আরও বলেন, রমনা থানা ছাত্রদল নেতা জুয়েল রানাকে ২১ নভেম্বর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এখনও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার পরিবারসহ দলের নেতাকর্মীরা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া খিলক্ষেত থানার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক ভূঁইয়াকে শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করেছে খিলক্ষেত থানার পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, সহদফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।

error: Content is protected !!