
সালাহ্উদ্দিন মজুমদার>>>
কেন্দ্রীয় নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে উপজেলা নির্বাচন কে সামনে রেখে সোনাগাজী এবং দাগূনভুইয়া উপজেলা পরিষদের জন্য দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফেনী পৌরসভা প্রাঙ্গনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বিকম দলীয় প্রার্থী হিসেবে সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুহুল আমিন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে বগাদানা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাখাওয়াতুল হক বিটু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জোবেদা নাহার মিলির নাম ঘোষণা করে। একই সময় ফেনী জেলার অপর পাঁচ উপজেলার প্রার্থীদের নাম ঘোষনা করা হয়।
এদিকে সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগ যার নাম ঘোষনা করেছে সেই রুহুল আমিনের দলীয় পদবি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।রুহুল আমিন নিজেকে সভাপতি দাবী করলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি- সম্পাদকের স্বাক্ষরিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে ফয়েজুল কবিরের নাম রয়েছে।
একই কমিটিতে নিজেকে সভাপতি দাবি করা রুহুল আমিনের নাম সহসভাপতি হিসেবে অন্তভুক্ত রয়েছে। ফয়েজুল কবির ২০১৩ সালে দলীয় কাউন্সিলে তৃনমূলের গোপন ভোটে সাবেক এমপি রহিম উল্যাহ কে ৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়। দল থেকে তিনি পদত্যাগ করেননি এমনকি দল তাকে বহিস্কারও করেনি,তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।
তৃনমূল নেতৃবৃন্দকে অন্ধকারে রেখে দলীয় প্রার্থীদেও নাম ঘোষনার খবর জানাজানি হলে সোনাগাজীতে আওয়ামীগের নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে,অনেকে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা জানান,২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় তৃনমূলের ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনিত করা হয়েছে। তারপর উপজেলা পরিষদ,পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনসহ আর কোন নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত নেওয়া হয়নি। জেলা থেকে প্রার্থীর নাম ঘোষনা করে মিছিল মিটিং আর কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার জন্য শুধু তাদের ডাকা হয়।কোন উন্নয়ন কাজের সাথে তৃনমুলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করা হয়না। সবকিছু হাতেগোনা কিছু নেতার দখলে রয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনেও সর্বোচ্চ সাফল্য পেতে দলটি প্রস্তুতি শুরু করে। দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও অন্য দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদেও মাঠে নামতে চায় আওয়ামী লীগ।
এ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে সম্প্রতি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়।দলের সব জেলা-উপজেলা কমিটির সভাপতি-সাধারন সম্পাদক অথবা আহবায়ক-যুগ্ন আহবায়কদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের প্রতিটি পদের একক অথবা তিনজন প্রার্থীর নামের সুপারিশ সংবলিত একটি প্যানেল তৈরী করতে হবে।
দলের উপজেলা শাখা প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে বর্ধিত সভা করে এ প্যানেল তৈরী করে দলের জেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের কাছে পাঠাবে।এরপর জেলা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সব উপজেলার প্রার্থী তালিকা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সরাসরি কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে পৌঁছে দিবে। এ তালিকায় জেলা ও উপজেলা শাখার সভাপতি-সম্পাদক অথবা আহবায়ক ও যুগ্ন আহবায়কের যৌথ স্বাক্ষর থাকতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শহিদ খন্দকার জানান, সভায় উপস্থিত সবার সর্বসম্মতিক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট আক্রামুজ্জামনকে আহবায়ক করে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ আহাম্মদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পিপি হাফেজ আহাম্মদ, মাষ্টার আলী হায়দার, জিপি প্রিয়রঞ্জন দত্তকে সদস্য করে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়।
মনোনয়ন বোর্ড গঠনের পর পরই তাৎক্ষনিক রবিবার রাতে ও সোমবার সারা দিন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি ও জমা দানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। চেয়ারম্যান পদে ১০ হাজার ও দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার টাকা হারে আদায় করে।৬ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৩টি ফরম জমা হয়। সোনাগাজী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৮ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করে।
মঙ্গলবার বিকালে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে মনোনয়ন বোর্ড সভার আয়োজন করে।ওই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম,ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরন উপস্থিত ছিলেননা।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দলীয় কার্যালয়ে বসিয়ে রেখে রাতে পৌর প্রাঙ্গনে উপজেলাগুলো থেকে আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী। তার বক্তব্য শেষে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষনা করে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বিকম।
তৃণমূলের মতামত ছাড়া কোন এখতিয়ারে আপনারা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম ঘোষণা করেছেন এমন প্রশ্ন রেখে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সমকাল কে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যৌথসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি নাম ঘোষনা করেছি।যাহা বলার দলের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী বলবে,এর চেয়ে বেশী কিছু বলার নেই।তাহলে কি দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত আপানার তোয়াক্কা করছেন না প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপিকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি,এমনকি ক্ষুধে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া মিলেনি।
সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল আনাম বলেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি নিজেই আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের সাধারন সম্পাদকের চিঠি আনুয়ায়ী তৃনমূলে বর্ধিত সভা করে তিন জনের প্যানেল গঠন করার নিয়ম থাকলেও সোনাগাজীতে কোন বর্ধিত সভা করা হয়নি।কেন্দ্র থেকে চুড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষনা করার নিয়ম থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগ কিভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষনা করেছে আমার জানা নেই।
চেয়ারম্যান পদে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক জহিরুল আলম জহির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক মফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মনছুর আহাম্মদ বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের জন্য তৃণমূলে বর্ধিত সভা করে কারো মতামত নেয়নি উপজেলা আওয়ামী লীগ।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ দ্বীন মোহাম্মদ বলেন,তৃনমূলের মতামতকে অগ্রাহ্য করে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। আমি কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাইবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমি সেটি মাথা পেতে নিবো।
অপরদিকে দাগূনভুইয়া উপজেলা বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মামুন কে দলীয় নমিনেশন না দিয়ে মোঃ শাহীন কে দলীয় নমিনেশন দেওয়ায় দাগুনভুইয়া বাসী রাস্তা অবরোধ এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে, দাগুনভুইয়াবাসী এইটা কোন ভাবেই মেনে নিতে রাজী না। তারা আরো কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিচ্চে।
তবে জয়নুল আবেদীন মামুন বলেন আমি কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাইবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমি সেটি মাথা পেতে নিবো।আমি দলের ত্যাগী নেতা।