
স্টাফ রিপোর্টার>>>ওমর আলম
ফেনীর আলোচিত ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যার পাঁচ বছর আজ। ২০১৪ সালের ২০ মে, এই দিনে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে, গুলি করে ও তাকে বহনকারী গাড়িতে আগুন ধরিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডটি শুধু দেশে নয়, বিশ্ব মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল।
ফেনী জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহম্মদ জানান, ঘটনার দিন রাতে নিহতের বড় ভাই জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুুরী মিনারকে প্রধান আসামি করে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দীর্ঘ বিচারকাজ শেষে গত বছরের ১৩ই মার্চ ফেনীর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক রায় ঘোষণা করেছিলেন। রায়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৯ আসামিকে ফাঁসির আদেশ প্রদান করে বিচারক। রায়ে প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরী,একরামের একান্ত সহযোগী তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলালসহ খালাস পায় ১৬ জন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান কবীর বেঙ্গল জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলুসহ ২২ জন আসামি কারাগারে থাকলেও পলাতক রয়েছে ১৭ আসামি। নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার কয়েক দিন পর উচ্চ আদালতে আপিল করে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা।
ফেনী জেলা কারাগারের জেলার মো. দিদারুল আলম জানান, রায়ের পর আসামিদের ফেনী জেলা কারাগার থেকে ঢাকার কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ফেনী জেলা কারাগারে রয়েছে আসামি নুর উদ্দিন মিয়া, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ ও তোতা মানিক। দণ্ডপ্রাপ্ত এ তিন আসামি অন্যান্য একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় আদালতে হাজিরা দিতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের ফেনী কারাগারে আনা হয়েছে। এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে কুমিল্লা জেলা কারাগারে রয়েছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির আদেল ও আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলু। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত যেসব পলাতক আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা হলো- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন জিহাদ চৌধুরী,আবিদুল ইসলাম আবিদ, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রাসেল, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান ওরফে ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মোঃ মহিউদ্দিন আনিছ, বাবলু ও টিটু।
নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার ১৪ মাস অতিবাহিত হলেও উচ্চ আদালতে আপিলের শুনানি না হওয়ায় রায় কার্যকর নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বজনরা। তবে রায়ের পর থেকে নিহতের স্ত্রীসহ পরিবারের তেমন কোনো সদস্য গণমাধ্যমের সঙ্গে রায় নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করেননি।
নিহত একরামের ভাই মোজাম্মেল হক জানান, দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পেলেও পর্দার আড়ালে থেকে গেছে ঘটনার মূল হোতারা। তবে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা যেন উচ্চ আদালত থেকে কোনোভাবে রেহাই না পায় সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। একই সঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকর করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
একরামের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নিহতের গ্রামের বাড়িতে পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। তবে একরামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দলীয় কোনো কর্মসূচির বিষয়ে শনিবার বিকাল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানালেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম।