
সালাহ উদ্দিন মজুমদার>>>
অগ্নি সন্ত্রাসে নিহত সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় রবিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন কোরাসিন তেল বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন ও কর্মচারী হেলাল উদ্দিন। সাক্ষ্য প্রদানের পর তাদের আসামী পক্ষের আইনজীবিরা দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করেন। এনিয়ে সপ্তম কার্য দিবসে আলোচিত মামলাটিতে আট জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদান ও জেরা সমাপ্ত হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) সাক্ষী নুসরাতের ছোট ভাই রাসেদুল হাসান রায়হান ও মাদ্রাসা ছাত্র জহির উদ্দিনের সাক্ষ্য গ্রহনের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।
মামলায় হাজিরার জন্য সকাল ১১টার দিকে ১৬ আসামিকে ফেনী কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলার শুনানি উপলক্ষে গতকাল আদালত ঘিরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। আদালত ভবন এবং বিচার কক্ষে প্রবেশে পূর্বের ন্যায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহন কালে পিবিআই সদস্যরা উপস্তিত থেকে সাক্ষ্য নোট করা নিয়ে আসামীপক্ষের আইনজীবিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আদালতকে সাক্ষ্য প্রদানের সময় কেরোসিন তেল বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন বলেন, সোনাগাজীর চরছান্দিয়া ইউপির ভুঞাবাজারে আমার লিটন স্টোর নামে একটি মুদি দোকান রয়েছে। গত ২০ বছর ধরে আমি দোকানটি পরিচালনা করছি, আসামী শামিম আমার পরিচিত, তার দোকানের পাশে শামিমের একটি মোবাইল ফ্লেক্সিলোডের দোকান রয়েছে। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ২/১ দিন আগে শামিম ৭০ টাকা দাম পরিশোধ ১ লিটার কেরোসিন তেল ক্রয় করেন। গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে পিবিআই আসামী শামিমকে নিয়ে আমার দোকানে আসলে সে স্বীকার করে আমার দোকান থেকে ১লিটার কেরোসিন তেল ক্রয় করেছে, আমি তাকে শনাক্ত করি। পিবিআই যে জব্দ তালিকা করে সেখানে আমি স্বাক্ষর করি।
সাক্ষ্য প্রদানের পর সাক্ষী লোকমান হোসেন লিটন কে জেরা করেন আসামী শামিমের আইনজীবি কামরুল হাসান। তিনি জানান, জেরার সময় সাক্ষী আদালতে স্বীকার করেন, পিবিআই তাকে যেভাবে বলেছে ম্যাসিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে সেভাবে বলেছে। তিনি না পড়ে ম্যাজিস্ট্রেটের প্রস্তুতকৃত জবানবন্দিতে স্বাক্ষর করেন।
এরপর আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন বোরকা দোকানের মালিক জসিম উদ্দিন ও কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদ। জসিম আদালতকে বলেন, সোনাগাজী পৗেরসভার জিরো পয়েন্টের মানিক প্লাজায় আমার ওয়াল্ড ফেমাস বোরকা বাজার নামে একটি দোকান রয়েছে। আমি ১১ বছর ধরে ব্যাবসা করি, দোকানে বোরকা সেলাই করে বিক্রি করি এবং ওড়না হিজাব বিক্রি করি। আসামী কামরুন নাহার মনিকে আমি চিনি, সে মাঝে মাঝে আমার দোকান থেকে বোরকা ক্রয় করতেন। গত ৪ মার্চ কামরুন নাহার মনি তার কয়েকজন বান্ধবি সহ আমার দোকানে আসে এবং ৫টি বোরকার অর্ডার করেন। তারা ১৪ মার্চের আগে বিভিন্ন তারিকে বোরকাগুলো ডেলিভারী নেয়। নুসরাতকে আগুন লাগানোর ২/৩ দিন আগে কামরুন নাহার মনি ১৯৮০ টাকা দামে ২টি কালো রংয়ের বোরকা ক্রয় করেন। গত ১৯ এপ্রিল তারিকে বেলা ১১টার দিকে পিবিআই মনিকে নিয়ে আমার দোকানে আসে। মনি তখন স্বীকার করেন সে আমার দোকান থেকে ২টি কালো রংয়ের বোরকা ক্রয় করেছে। ৩০ এপ্রিল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আমি এই জবাবন্দি প্রদান করি।
জসিমের সাক্ষ্য শেষে আদালতে দোকান কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদ একই রকম সাক্ষ্য প্রদান করেন। পরে তাদের জেরা করেন আসামী কামরুন নাহার মনির আইনজীবি আহসান কবির বেঙ্গল ও নুর ইসলাম। আইনজীবি আহসান কবির বেঙ্গল বলেন, জেরার সময় সাক্ষী হেলাল উদ্দিন আদালতকে জানান মনি যে বোরকাটি ক্রয় করেছে সেটি ছাই কালারের তবে দোকান মালিক জেরায় জানান বোরকাটি পিত কালারের। উভয় সাক্ষী আদালতে স্বীকার করেন গত ৪ মার্চ মনি ও তার বান্ধবিরা মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠানের কথা বলে ৫টি বোরকার আর্ডার করলেও ১৪ মার্চ মনি শুধু মাত্র ১টি বোরকা ডেলিভারী নেয়। রেডিমেট যে বোরকার ক্রয়ের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো কে ক্রয় করেছে সাক্ষীরা তাহা জানেননা। আসামীর আইনজীবি আহসান কবির বেঙ্গল আরো বলেন, জেরার সময় উভয় সাক্ষী আদালতকে স্পষ্ট করে জানান, পিবিআই তাদের যেভাবে বলেছে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সেভাবে জবানবন্দি প্রদান করেছে, তারা না পড়ে জবানবন্দিতে স্বাক্ষর করেছেন।
পর্যায়ক্রমে আদালতের নির্দেশে তিন সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু, ফরিদ উদ্দিন নয়ন, মাহফুজুল হক, আবুল বশর, নুর ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম মিন্টু।
আদালতের পিপি হাফেজ আহাম্মদ ও বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, তিন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদানের পর তাদের আসামী পক্ষের আইনজীবিরা জেরা করেন। যে ৮ সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন তারা সবাই নুসরাতকে আগুন লাগিয়ে হত্যা করার পক্ষে আসামীদের জড়িয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। সোমবার নুসরাতের ছোট ভাই রাসেদুল হাসান রায়হান ও জহির উদ্দিনের সাক্ষ্য গ্রহনের আদেশ দিয়ে আদালত মুলতবি ঘোষণা করেন বিচারক।