
অফিস ডেস্ক>>>>
১ মাসে হাসপাতালের ২০০ জন চিকিৎসকের খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা বলে যে খবর প্রচারিত হয়েছে, তাকে ‘মিথ্যা তথ্য ও গুজব’ বলে অভিহিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলছেন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সব ধরনের স্টাফ মিলিয়ে ২ হাজার ২৭৬ জন স্টাফের ২ মাসের বিল হিসাব করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। সেটিও সবার থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতসহ সব কিছু মিলিয়ে। যারা ১ মাসে ২শ জন চিকিৎসকের খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা হিসেবে গুজব ছড়িয়েছে যারা, তাদের বিচারও দাবি করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) নিজ কার্যালয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, আগামীকাল বুধবার (১ জুলাই) সকালে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের বক্তব্য তুলে ধরা হবে।
গত কয়েকদিনে দেশব্যাপী আলোচনার অন্যতম বিষয় ‘২০ কোটি টাকা’ বিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০০ জন চিকিৎসকের ১ মাসের খাবারের বিল ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে এমনকি জাতীয় সংসদেও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খোদ ঢামেক হাসপাতালের সবখানেও এ বিষয়টি আলোচনার মূল বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক মুখোমুখি হয়েছিলেন কয়েকটি গণমাধ্যমের। ৩ সপ্তাহের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, এই ৩ সপ্তাহে মোট চিকিৎসক কাজ করেছেন ৫১০ জন, নার্স কাজ করেছেন ৬৩৬ জন, কর্মচারী কাজ করেছে ৪৫৬ জন, টেকনিশিয়ান ৭৬ জন, সিকিউরিটি ২১৬ জন। মোট ৩ সপ্তাহের জন্য কাজ করেছেন ১,৮৯৪ জন। এর বাইরে বিশ্রামে ছিলেন ৩৮২ জন। অর্থাৎ ১ মাসে কাজ করেছেন মোট ২,২৭৬ জন। ২ মাসের হিসাবে সেক্ষেত্রে কিন্তু ৪,৫৫২ জন কাজ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই সাড়ে ৪ হাজার জনবল হোটেলে থেকেছেন, খেয়েছেন। তাদের প্রতিদিনের ৩ বেলার খাবারের জন্য বরাদ্দ ৫শ টাকা। তাদের থাকা-খাওয়া ছাড়াও যাতায়াতের বিষয় আছে। এর জন্য ১৩টি মাইক্রোবাস, ১টি মিনিবাস ও ২টি বাস রয়েছে। এই সবকিছুর একটি খরচ আমরা প্রাক্কলন করে উপস্থাপন করেছি। সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখে পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপনা করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন দিয়েছেন। সব খরচ বিল আকারে পাস হওয়ার পর হোটেলগুলোকে পেমেন্ট করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে ১ কোটি টাকা ছিল। সেটি দিয়ে কিছু বিল পেমেন্ট করা হয়েছে। এর বাইরে আমরা কিন্তু এখনো কোনো বিল পাইনি। যে কোনো কাজে খরচসহ আমাদের যে কোনো কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। কোথাও যদি অতিরিক্ত ব্যয় হয়ে থাকে, সেটি তারা দেখবেন। অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। তাদের কোনো অনুমোদন ছাড়া আমাদের কোনো কাজ হয় না।
হোটেল নির্বাচনসহ ঢামেক হাসপাতালের স্টাফদের থাকা-খাওয়ার প্রক্রিয়া তুলে ধরে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, হাসপাতালের প্রায় ১৯শ কর্মকর্তা-কর্মচারী ৩ ব্যাচে হোটেলে থাকছেন। এই জনবলের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩০টি হোটেল রাখা হয়েছে। এই হোটেলগুলো নির্বাচন ও সেখানে আমাদের স্টাফদের রাখার বিষয়ে একটি কমিটিও কাজ করছে। হোটেল নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী সেটি যাচাই-বাছাই করেছে। তারা হোটেলের থাকা-খাওয়ার খরচ জেনে কমিটিকে অবহিত করে তারপরই হোটেল চূড়ান্ত করেছে।
নাসির উদ্দিন আরও বলেন, ঢাকা মেডিকেল দেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, যারা ৭৪ বছর ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ আজ এখানে যারা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন, তাদের থাকা-খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে— এটি দুঃখজনক। আমরা মনে করি, আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরু’দ্ধে এরকম অপ’প্রচারের মাধ্যমে আমাদের সবাইকে অ’পদস্থ করা হয়েছে। আমরা সবাই অত্যন্ত অপ’মানিতবোধ করছি এবং দুঃখ পেয়েছি। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, কাল হয়তো তদন্ত কমিটির সামনে বক্তব্য দিতে হবে— এটি কোনো প্রত্যাশিত নয়।
তবে যারা এমন অপ’প্রচার চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক। তিনি বলেন, যারা এরকম বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা আমরা জানতে চাই। যিনি মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি কীভাবে ও কোথা থেকে এ তথ্য পেয়েছেন, তা তার গণমাধ্যমের সামনে এসে বলা উচিত। এই যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের হে’য় করা হয়েছে, সেজন্য আমি বিচার চাই।